[:bn]ভারতের বিস্ময়কর প্রতিভা জে.বি.এস.হ্যালডেন[:]

[:bn]ভারতের বিস্ময়কর প্রতিভা জে.বি.এস.হ্যালডেন[:]

September 24, 2018

[:bn]নামটা বিদেশি হলেও হ্যালডেন কিন্তু একসময় ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তারপর থেকেই তিনি ভারতে বাস করতে শুরু করেন। সম্ভবত ১৯৫৬ সনে হ্যালডেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। এখানে তিনি I.S.I বা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। এরপর থেকেই হ্যালডেন সাহেব বেশবাস এমন কি আহারে-বিহারে ভারতীয় জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হতে শুরু করেন। পরনে ঢিলেঢালা পাজামা, গায়ে পাঞ্জাবি, পায়ে স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায় হ্যালডেন সাহেব কলকাতার রাজপথে সচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতেন। এমন কি এরপর তিনি মাছ-মাংস ছেড়ে নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে শুরু করেন।
হ্যালডেন কেন ইংলন্ড ছেড়ে ভারতে চলে এলেন তার একটা যুক্তিসম্মদ্ধ কারণ নিশ্চয় আছে। প্রফেসর হ্যালডেন একসময় কমিউনিস্ট ছিলেন। যাকে বলে গোঁড়া কমিউনিস্ট, তিনি ছিলেন তাই। পরে অবশ্য কমিউনিজম থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। ইংলন্ড ছেড়ে ভারতে চলে আসার যে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা আমরা জানতে পারি সেটি হল সুয়েজ খাল সমস্যা নিয়ে ইংরেজদের নাক গলানো এবং মধ্যস্থতা করবার প্রবণতা যা নাকি তিনি আদৌ পছন্দ করেননি। এছাড়া তাঁর মনে হয়েছিল ভারত গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। এখানকার জলবায়ু, আবহাওয়া তাঁর পক্ষে জীববিজ্ঞান (Biology), জন্ম-উৎপত্তি এবং প্রজনন সংক্রান্ত বিদ্যা অনুশীলনের সহায়তা করবে।
জে বি এস হ্যালডেনের পুরো নামটা বেশ লম্বা। জন বার্ডন স্যান্ডারসন হ্যালডেন। একেই ছোট করে নিয়ে তিনি নিজের পরিচয় দিতেন J. B. S. Halden বলে। ইংরিজিতে যাকে বলে অভিজাত অর্থাৎ Blue Blood বা ধমনীতে নীল রক্ত প্রবাহমান, হ্যালডেন ছিলেন তাই।
হ্যালডেন সাহেবের পূর্বপুরুষরা ছিলেন স্কটল্যান্ডের লোক। একসময় গোটা পরিবারটাই একটা দুর্গে বাস করতেন। মাঝে মাঝে উপজাতি লোকেরা রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে হানা দিয়ে তাঁদের গোরু-ছাগল নিয়ে পালাত। ভাড়াটে যোদ্ধা বা লোকজনের সাহায্যে এই সব আক্রমণকারীদের হ্যালডেনের পূর্বপুরুষরা কোনোভাবে বিতাড়িত করবার চেষ্টা করেছেন। জানা যায় হ্যালডেনের এক পূর্বসূরী তাঁর নামও জন হ্যালডেন, তিনি তরবারি নিয়ে দক্ষিণ সমুদ্রের স্ননিকট প্রিন্স অফ অরেঞ্জের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন।
হ্যালডেনের এক পূর্বপুরুষ জন স্কট হ্যালডেন এডিনবরা থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। কিছুদিনের জন্য তিনি ডান্ডির ইউনিভার্সিটি কলেজে ডেমনস্ট্রেটরের কাজ করেছেন। এখানে থাকাকালীন তিনি ঘরবাড়ি, স্কুল এবং নর্দমার নিকটস্থ বাতাসের শুদ্ধতা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। এরপর তিনি তাঁর এক কাকা স্যার জন বার্ডন স্যান্ডারসনের কাছে যান। এই ভদ্রলোক তখন অক্সফোর্ডের প্রফেসর। এই সব পূর্বসূরীদের শিক্ষার কিছু অংশ J.B.S- এর ধ্যান-ধারণার মধ্যে এসে যায়। এর ফলে মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই হ্যালডেন তাঁর নার্সের কাছ থেকে জার্মান ভাষা খানিকটা শিখে ফেললেন। তাঁর ছোট বোন NAOMIপরে একজন নামী লেখিকা হয়েছিলেন।
J.B.S-এর প্রথম শিক্ষা শুরু হয় তাঁর বাবার কাছে। নানা ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ তিনি ছেলেকে দেখাতেন এবং তার সামনেই সম্পন্ন করতেন। মাত্র আট বছর বয়সেই হ্যালডেন সংখ্যার সারি, যেমন ১,২,৩,৪…৭০,৭১,৭২…ইত্যাদি শিখে ফেললেন। শারীরিক দিক থেকে হ্যালডেন ছিলেন খুবই সুগঠিত দেহের অধিকারী। স্কুলে পড়ার সময় জ্যাক (তাঁর ডাকনাম) অন্য এক ছাত্রের সঙ্গে মারপিটে প্রবৃত্ত হন। তাঁর বিপক্ষের ছেলেটির নাম ম্যানুয়েল- স্পেনের অধিবাসী। ছেলেটি বেশ ক্ষিপ্রগতি এবং বক্সিং শিখেছে। তবু হ্যালডেন তার সঙ্গে দ্বৈরথ সমরে নামলেন। এবং আশ্চর্য! কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর প্রচন্ড ঘুষির আঘাতে ম্যানুয়েলকে কাবু করে ফেললেন। মার খেয়ে ম্যানুয়েলের মুখ ফুলে উঠল, চোখের নিচে কালচে দাগ। ম্যানুয়েল রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে বাঁচল।
শুরুতে হ্যালডেনের বাবা স্কট হ্যালডেন Cherwall-এ তাঁর বসবাস শুরু করেন। এখান থেকেই J.B.S. Halden Eton- এর স্কুলে চলে যান। কিন্তু Eton-এর সিনিয়র ছাত্ররা তাঁকে সুনজরে দেখেনি। সুযোগ পেলেই ওরা তাঁকে মারধর এমন কি নিপীড়ন করতেও ছাড়েনি।

Eton-এ পড়ার সময় হ্যালডেন তাঁর স্কুলজীবনের শততম দিনটি স্কুলে কাটান। এটি হল স্কুলের দ্বিতীয় মেধাবী ছাত্রের পুরস্কার। তখন তাঁর বয়স ষোল। হ্যালডেন অবশ্য ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি এবং বায়োলজিতেও কৃতিতবের জন্য বহু পুরস্কার পান। Eton -এ পড়ার সময় হ্যালডেন জার্মান ভাষা আয়ত্ত করেন এবং ১৯ বছর বয়সে তিনি Eton ছেড়ে Oxford –এ আসেন তখন জার্মান ছাড়াও ল্যাটিন, গ্রীক, ফ্রেঞ্চ শিখে ফেলেছেন। এমনকি ইতিহাস ও কিছুটা রাজনীতি তাঁর আয়ত্ত হয়েছে। তবে জন স্টুয়ার্ট মিলের Principles of Political Economy পড়ে তাঁর ভালো লাগেনি। Eton-এ কোনো কোনো শিক্ষক তাঁকে আদৌ পছন্দ করতেন না। তাঁর সম্বন্ধে একজন শিক্ষক মন্তব্য করেন- He is a baffling boy and I shall be glad to be rid of him.
১৯১৪ সনের মাঝামাঝি তাঁর বাবা স্কট হ্যালডেন ছেলের ভবিষ্যৎ ঠিক করে ফেললেন। J.B.S- কে তিনি আবার জীববিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের জন্য শাখায় পড়াশুনো করতে উদ্দীপিত করলেন। এর কিছুদিন পরেই তিনি Harripon কিংবা Abel -এর অধীনে Oxford Lab -এ গবেষণার কাজে সহায়তা শুরু করলেন।এবং কিছুদিন পরেই J.B.S জানলেন যে এই গবেষণার কাজে তিনি একটি প্রাইজ পেয়েছেন।
এরপরই J.B.S- এর জীবনের নতুন অধ্যায় বিজ্ঞান থেকে যুদ্ধে যোগদান। জার্মান যুদ্ধবাজদের সঙ্গে এই যুদ্ধে ইংরেজ এবং ফরাসিরা অনেক সময় বেকায়দায় পড়েছে। যুদ্ধে জার্মানরা ক্ষতিকারক গ্যাস ছাড়তে শুরু করেন। এরপরই গ্যাস মাস্ক ব্যবহার করতে শুরু করে ইংরেজ এবং ফরাসিরা এবং এর সাহায্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি কিছু অংশে নিজেদের অনুকূলে আনতে সমর্থ হয়।
এই সময় মেডিক্যাল (ফিজিওলজিক্যাল কমিটি) বিজ্ঞানের ডিরেক্টর জেনারেল হ্যালডেনকে চিঠি লিখে জানতে চান ডুবন্ত সাবমেরিন থেকে পালাবার কোনো সহজ উপায় গবেষণার সাহায্যে হ্যালডেন কি বের করতে পারবেন? এই ভার দায়িত্বভার ব্রিটিশ সরকার অবশ্য তাঁর ওপর ন্যস্ত করতে রাজি আছেন। সমুদ্রতলের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা বা হিমাঙ্ক ব্যতিক্রমী হতে পারে। এই বিষয়ে হ্যালডেন তাঁর একটি অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।– একবার হ্যালডেন এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে বরফের মধ্যে নিমজ্জিত ছিলেন প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিট। সেখানের বাতাসে কার্বন –ডাই- অক্সাইডের পরিমাণ ছিল সাড়ে ছয় পার্সেন্ট। বলাবাহুল্য হ্যালডেন অজ্ঞান হয়ে যান। পরে অবশ্য উদ্ধার হলে তিনি চেতনা ফিরে পান।
হ্যালডেন যুদ্ধে ছিলেন ব্ল্যাক ওয়াচ রেজিমেন্টে। যুদ্ধে একসময় তিনি আহত হন। পরে সেবা-যত্নে ভালো হয়ে ওঠেন। এখান থেকেই হ্যালডেন সামরিক জীবন ত্যাগ করে আবার শিক্ষা জগতে ফিরে আসেন। কিছুকাল লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেমব্রিজে গবেষণার কাজ করে হ্যালডেন মনস্থ করেন তিনি ভারতে গিয়ে থাকবেন। ইতিমধ্যে হ্যালডেন রয়্যাল সোসাইটির সদস্য (FRS) নির্বাচিত হয়েছেন। এই সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। যাতে তিনি ভারত থেকে জীববিজ্ঞান ও বায়োলজির ওপর গবেষনা চালিয়ে যেতে পারেন। তাঁর এই আগ্রহের স্বপক্ষে হ্যালডেন লেখেন যে দেশ শান্তিকামী জগত প্রতিষ্ঠায় দায়বদ্ধ (World Peace) যেমন নাকি ভারত, সেই দেশে প্রতি তাঁরও একটা দায়বদ্ধতা আছে।
১৯৫২ সনে হ্যালডেন ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে আমন্ত্রিত হন। প্রায় ছ- মাস ভারতে থাকার সময় তিনি সাকুল্যে পঁয়ত্রিশটি বক্তৃতা দেন। এর মধ্যে বারোটি I.S.I বা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে। I.S.I -তে বক্তৃতা দেবার সময় ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়।
J.B.S-কে এই সময় প্রফেসর নির্মল কুমার বসু একটি পত্র লেখেন। একদা তিনি গান্ধীজীর সচিবের কাজ করেছেন। এই ভদ্রলোক মহাত্মা গান্ধীর চল্লিশটি অভিযানের ইতিহাস লিখতে মনস্থ করেন। এর জন্য প্রায়.৮০০ পাউন্ড ব্যয় হতে পারে। হ্যালডেন এর জন্য ১০০ পাউন্ড দিতে আগ্রহী হন। কিন্তু নানা কারণে নির্মল কুমার বসুর এই সদিচ্ছা আর রূপায়িত হয়নি।
১৯৫৪ সনে হ্যালডেন আবার I.S.I –তে আসেন। প্রফেসর মহলানবিশকে তিনি বলেন যে ১৯৫৮ সনে তিনি তাঁর কর্মজীবন থেকে অবসর নিচ্ছেন। ব্রিটেন অবশ্য তাঁকে একটা আংশিক কাজের কথা বলেছে। কিন্তু তিনি নিজে ভারতে কোনো অবৈতনিক পদে গবেষণার কাজ নিতে চান। তাঁর স্ত্রী হেলেন অবশ্য ভারতে একটা অধ্যাপনার কাজে রত আছেন। কিন্তু তাঁদের দুজনকে যদি এছাড়া কোনো গবেষণার কাজের সঙ্গে যুক্ত না করা হয় তাহলে তাঁর ভারতে আসাটাই মিথ্যে হবে।
১৯৫৬ সনে J.B.S মনস্থ করেন যে এই বছরের গ্রীষ্মেই তিনি আর হেলেন ভারতে পাড়ি দেবেন। দুটি জায়গা থেকে তাঁর কাছে নিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। ইউনিভার্সিটি B.H.U বা আর অপরটি I.S.I বা প্রফেসর মহলানবিশের কাছ থেকে। প্রফেসর মহলানবিশ তাঁকে ১৯৫৭ সনে চার মাসের জন্য সস্ত্রীক I.S.I -তে আমন্ত্রণ জানান। প্রফেসর আরো জানান তাঁদের দু’জনকেই তিনি পার্ট-টাইম বা ফুল- টাইম ভিত্তিতে I.S.I -তে পেতে আগ্রহী। তাঁদের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী এই নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। যেমন রিসার্চ প্রফেসর বা ভিজিটিং প্রফেসর কিংবা রিসার্চ

ডিরেক্টর তাঁর যা খুশি সেই পথেই তাঁকে বহাল করা হবে। আর তাঁর স্ত্রী হেলেনকে যে কোনো টিচিং পোস্ট দিতেও ইনস্টিটিউট রাজি। শর্তাবলী হেলেন যেমন চাইবেন তেমনি হবে।
প্রাণীজগত বিশেষ করে পক্ষীকুল সম্বন্ধে J.B.S -এর ছিল অসীম আগ্রহ। ভারতীয় পক্ষীতত্ববিদ Salim Ali –র সঙ্গে তিনি যোগসুত্র স্থাপন করেন। ভারতে আসার আগে তিনি MANKIND লিখেছিলেন। এখন অহিংসার ওপর তিনি আরও গুরুত্ব দিলেন। অকারণে প্রাণীহত্যা J.B.S-এর আদৌ পছন্দ ছিল না।
এই সময় ১৯৬১ সনে ইংলন্ডেশ্বরী রানি এলিজাবেথ ভারতে আসবেন বলে জানা গেল। রানির ভ্রমনসূচী তৈরি করার সময় হ্যালডেনকে জিগ্যেস করা হল ভারতের কোন দর্শনীয় বস্তুগুলি তাঁকে দেখানো যেতে পারে। হ্যালডেন জবাব দিলেন- ভারতের বন্যপ্রাণী আবাস, যেমন আসামের কাজিরাঙ্গা অরণ্য যেখানে গন্ডার অবশ্য দর্শনীয়। তারপর ওড়িশার চিল্কা হ্রদ যেখানে এই শীতে অজস্র সাইবেরিয়ার হাঁস মনের সুখে জলে সাঁতার দিচ্ছে। এরপর রাজস্থানের সম্বল হ্রদ যেখানে কদাচিৎ দৃষ্ট ফ্ল্যামিংগো পাখি দেখা যায়। এছাড়া গভর্নর ইচ্ছে করলে পক্ষীতত্ববিদ Salim Ali-র ভারতীয় পাখির ছবিসহ একটি ভল্যুম তাঁকে উপহার দিতে পারেন।
এরপর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং তাঁর স্ত্রী হেলেনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেখা করতে চান। কিন্তু সমস্যাটা হল হ্যালডেন কিংবা হেলেন কারো রানির সঙ্গে দেখা করার মতো জামাকাপড় ছিল না। হ্যালডেনের Tail Coat-টা শেষ কেনা হয়েছিল ১৯৩৯ সনের আগে। হেলেনেরও রানির সমীপে যাওয়ার মতো তেমন সান্ধ্য পোশাক, জুয়েলারি ইত্যাদি কিছুই ছিল না। হ্যালডেন খাদি গ্রামোদ্যোগ ভবন থেকে কাপড় কিনে পাজামা এবং পাঞ্জাবি তৈরি করিয়ে নিতেন। এছাড়া ওড়িশায় ভ্রমণের সময় তাঁর পায়ে একটা চোট লেগেছিল। যেটা এখনও সারেনি। এই অবস্থায় নেংচে-নেংচে রানির সঙ্গে দেখা করাটা খুবই হাস্যকর মনে হত। বন্ধুদের তিনি জানান রানির সঙ্গে করমর্দন করার সুযোগ নিতে তিনি আদৌ উৎসাহী নন।
কিন্তু এই সময় I.S.I- এর ডিরেক্টর প্রফেসর মহলানবিশের সঙ্গে হ্যালডেনের একটা মন কষাকষি শুরু হয়ে গেল। প্রথমে ছোটখাটো বিষয়। যেমন একজন নিম্নমানের কর্মচারী একদিন এক অফিসারের সামনে সিগারেট খাওয়ার অপরাধে চাকরি খোয়াল। হ্যালডেন শুনে খুবই দুঃখ পেলেন। সখেদে তিনি মন্তব্য করলেন, I.S.I -এর কোনো কর্মচারী নিজেকে ব্রিটিশ ভাইসরয়ের সমতুল্য মনে করে। কিন্তু তারা যে একটি বিজ্ঞান বিষয়ক ল্যাবরেটরির কর্মচারী একথাটি তাদের ভুলতে দেরি হয় না।
এর পরের ঘটনাটি হল ১৯৬১ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে। মাসের শেষ দিকে কোসিগিন (পরে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী) কলকাতায় সরকারি অতিথি হিসাবে পদার্পণ করেন। স্থির হয় কোসিগিন I.S.I -তে এলে তাঁকে ইনস্টিটিউটের কাজকর্ম দেখানো হবে। হ্যালডেনের কথা মতো দুজন সিনিয়র স্টাফ এখানকার কাজের একটা exhibit তৈরি করে রাখবে কোসিগিনকে প্রদর্শনের জন্য। এর সঙ্গে দুজন জুনিয়র রিসার্চ ওয়ার্কারের কাজের একটা ফিরিস্তি বানিয়ে রাখা হল।
কিন্তু কোসিগিনের আগমনের ঠিক আগের দিন প্রফেসর মহলানবিশ এসে পৌঁছলেন এবং হ্যালডেনের তৈরি করা প্রোগ্রামটি তিনি বাতিল করে দিলেন। পরিবর্তে কোসিগিনকে কী দেখানো হবে তার একটা নির্দেশিকা তিনি বের করলেন।

– দেবল দেববর্মা

[:]