এই শীতে চড়ুইভাতিতে

এই শীতে চড়ুইভাতিতে

March 9, 2018

[:bn]শীত এসে গেছে।শীতে পিকনিক হবে না তাই কখনও হয়। পিকনিক মানে এক-দিন সকলে মিলে নির্ভেজাল আনন্দ। বাড়ি থেকে কিছু দূরে স্বপরিবারে, স্ববান্ধবে আনন্দ, ভালো-মন্দ খাওয়া-দাওয়া, হৈ-হুল্লোড়। পিকনিক মানে যেন আলাদা হওয়া সম্পর্ককে আবার জড়িয়ে ধরা। মনের মত স্পট দেখে বেরিয়ে পড়তে হবে বনভোজনের  উদ্দেশ্যে, ছুটির দিনে। আমাদের কাছে-পিঠে অবস্থিত কিছু পিকনিক স্পটের সুলুক সন্ধান এই প্রতিবেদনে।

এ্যাকোয়া মেরিনা : এই মুহূর্তে হুগলির অন্যতম জনপ্রিয় পিকনিক স্পট এ্যাকোয়া মেরিনা, কারণ এখানে পিকনিকের সঙ্গে পাওয়া যায় বেশ কিছু উপরি অসীম আনন্দ। এখানে সবুজে ঢাকা পরিবেশে অফুরন্ত অক্সিজেন, একাধিক কৃত্রিম জলাধার, নানান ফুলের গাছ  যেকোনও সেলিব্রেশনকে অন্য মাত্রা এনে দেয়।পিকনিকের ফাঁকে জলকেলিও হতে পারে। বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসের গালিচার ওপর রয়েছে পিকনিক স্পটগুলি। ছোট বড় দু’ধরনের পিকনিক স্পট রয়েছে।(৪০/২০ জনের)। ভাড়া ১১০০ থেকে ৭০০ টাকা, গ্রূপ বুকিং-এ সামান্য ছাড় পাওয়া পারে।  প্রবেশ মূল্য আলাদা, কাছেই রয়েছে বাজার। সেখানে সবজি, মাছ-মাংস,ডেকোরেটর-এর ব্যবস্থা রয়েছে। এ্যাকোয়া মেরিনার  ভিরতরেও রেস্টুরেন্ট আছে। এখানে রয়েছে গাছবাড়ি। জঙ্গলে না গিয়েও জঙ্গলে থাকার অনুভূতি। আছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু। পাওয়া যাবে গ্রাম বাংলার কটেজে থাকার অনুভূতিও।  হুগলী স্টেশন থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ। টোটো, অটো, রিক্সা সব চলে। জায়গাটিতে দিল্লি রোড বা জি টি রোড হয়েও আসা যায়। শীতের সিজনে পিকনিক স্পটের জন্য অগ্রিম বুকিং করা প্রয়োজন। যোগাযোগের নম্বর ৯৮৩১১৮৯১৯১। এ্যাকোয়া মেরিনা হল সেই ওয়াটার পার্ক যা মনকে সর্বদা আনন্দ দেয়। হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল/ বর্ধমান লোকাল চেপে হুগলি স্টেশনে নামতে হবে (৫০ মিনিট সময়)।

ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক :  চন্দননগর কে.এম.ডি.এ-এর সহায়তায় ১৩৫ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্ক যা এলাকায় পরিচিত কে.এম.ডি.এ পার্ক নামে। বিশাল এই পার্কের সৌন্দর্যয়নের ওপর বিনোদনের ব্যবস্থা বেশ ভালো। সবুজের  বিস্তার পার্ক জুড়ে। মরসুমি ফুলের বাহার মন ভোলায়। প্রজাপতিরা ফুলে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঘুরে বেড়ায় আপন মনে। বিশাল এই পার্কের মধ্যে চড়ুইভাতির অনেক স্পট। তবে শীতের সিজেনে অগ্রিম বুকিং প্রয়োজন।’ পিকনিকের পাশে রয়েছে বোটিং -এর ব্যবস্থা, ভিতরে জলখাবারের জন্য রেস্তোরাঁ রয়েছে। কে.এম.ডি.এ পার্ক এর মধ্যে বিশাল কয়েকটি  জলাশয় রয়েছে। ঘুরে বেরিয়ে অলস দুপুরে সময় যে কিভাবে কেটে যাবে তা বোঝাই যাবে না। হাওড়া থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে এই স্পটে পৌঁছনো যাবে ব্যান্ডেল, বর্ধমান শাখার চড়ে। স্টেশন থেকে ১৫ মিনিটের পথ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। বুকিং- এর  জন্য যোগাযোগ ০৩৩-২৬৮২০০০৬। সমগ্র পার্ক দেখভাল করে চন্দননগর পুরনিগম।

সুয়াখাল পর্যটন কেন্দ্র : সুয়াখাল পর্যটন কেন্দ্র পরিচিত ‘এনার্জি এডুকেশন পার্ক’ নামে। প্রায় আট একর জায়গা জুড়ে প্রকৃতির কোলে সুয়াখালের অবস্থান। এই অঞ্চলে আগে প্রচুর ময়ূর দেখা যেত। জনজীবনের চাপে তার সংখ্যা এখন খুব কমে গেছে তবে গ্রামের ভিতর গেলে এখনও দেখা মেলে ভারতের জাতীয় পাখির। এখানে অনেকগুলি পিকনিক স্পট রয়েছে। পার্কটি পরিচালনা করে হুগলি জেলা পরিষদ। যোগাযোগ– ০৩৩-২৬৮৪/ ২১৩৫/ ২৬৮০/ ২৬৮১। বনভোজনের পাশাপাশি এখানে এসে পরিচিত হওয়া যাবে জলবিদ্যুৎ,সৌরবিদ্যুৎ, বায়বীয়  বিদ্যুৎ প্রভৃতি বিজ্ঞানভিত্তিক সঙ্গে।আছে ওয়ান্ডার হাউস, ওয়ান্ডার ল্যান্ড যা বাচ্চাদের যা বিশেষ ভালো  লাগবে। শীতের সিজেনে মরশুমি ফুলে সেজে ওঠে পুষ্প উদ্যান। গাঁদা ফুলের বাহার মন রাঙিয়ে দেয়। রয়েছে প্রচুর বড় বড় গাছ। ছোটদের খেলার জন্য রয়েছে মাঠ এবং টয়ট্রেন। পিকনিক স্পট হিসেবে এলাকায় সমাদৃত সুয়াখাল। খোলা থাকে সকাল আটটা থেকে সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত। কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে জি.টি রোড ও দিল্লির রোডের সংযোগস্থলে হুগলি জেলার রাজহাট অঞ্চলে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রটি। হাওড়া থেকে ট্রেনে গেলে বর্ধমান লোকাল চেপে মগরায় নেমে সেখান থেকে টোটো, অটো,রিকশায় পৌঁছানো যাবে সুয়াখালে। যোগাযোগ হুগলি জেলা পরিষদ।

গাদিয়াড়া :   পিকনিকের জন্য সর্বদা নদীকেন্দ্রিক জায়গার গুরুত্ব বেশি ।আর সেই স্পট যদি সঙ্গমস্থল হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই। হাওড়া জেলায় হুগলি- দামোদর- রুপনারায়নের সংযোগস্থলে পিকনিক স্পট গাদিয়াড়া। নদীর সৌন্দর্য অতুলনীয়। পিকনিকের পাশাপাশি নদীর ধারে ধারে ঘুরে বেড়াতে পারা যায়। পায়ে হেঁটে। মেছো নৌকায় ভ্রমণও করা যেতে পারে। নদীর কাছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজটিতে বসে পিকনিকের আসর, তার জন্য অবশ্যই আগে থেকে যোগাযোগ করতে হবে রাজ্য পর্যটন দপ্তরের অফিসে বিবাদী বাগে। তবে নদীর ধরে রয়েছে একাধিক পিকনিক স্পট।  দিনের শেষে সূর্যাস্তের অপরূপ শোভা মনের ক্যানভাসে ভেসে থাকবে অনেকদিন। কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে উলুবেড়িয়া হয়ে গাদিযাড়ার  দূরত্ব  ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার। ধর্মতলা থেকে সরাসরি বাসও ছাড়ে।  ট্রেনে চেপে গেলে হাওড়া-মেদিনীপুর/ খড়গপুর শাখার যে কোন ট্রেনে চেপে উলুবেরিয়া বা বাগনানে নেমে, সেখান থেকে অটো,টোটো, বাসে চেপে পৌঁছে যাওয়া যাবে গাদিয়াড়ায়। ভুললে চলবে না এই ত্রিবেনী সঙ্গম সংগমের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লর্ড ক্লাইভ বানিয়েছিলেন ফোর্ট মর্নিংটন  যা পরিচিত  লর্ড ক্লাইভের দুর্গ নামে। উৎসাহীরা নৌকো করে বেরিয়ে আসতে পারেন গেঁওখালি। এক কথায় নদীর পারে গাদিয়াড়ার পিকনিকের আনন্দই আলাদা। পর্যটন দপ্তরের অফিসের ফোন নম্বর ০৩৩-২২৪৩-৬৪৪০ মোবাইল ৯৭৪২৫১০০৭৬।এখানে ঘর(পিকনিক স্পট) অগ্রিম বুকিং করা যায়।

গড়চুমুক : হাওড়ার অন্যতম বিখ্যাত পিকনিক স্পট। হাওড়ার শ্যামপুর থানার অন্তর্গত এই পিকনিক স্পটটি। এখানে একাধিক পিকনিক পার্টি একসঙ্গে বনভোজন করতে পারে। গড়চুমুক অবশ্য বিখ্যাত অন্য আরও একটি কারণে, এখানে রয়েছে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম লক গেটের একটি, ৫৮ গেট। আটান্ন গেট দেখতে শীতের সিজনে এখানে ভিড় করেন পর্যটকরা, সঙ্গে বনভোজনের তৃপ্তি– দুই মিলে, শীতের সিজনে যেন গড়গড়িয়ে চলে, জমে ওঠে গড়চুমুক। এখানে রয়েছে থাকার জন্য হাওড়া জেলা পরিষদের হলিডে হোম। যোগাযোগ ০৩৩-২৬৩৮/ ৪৬৩৩/ ৩৪।

পারমাদান অভয়ারণ্য  :  বনগাঁ থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত পারমাদান অভয়ারণ্য। শিয়ালদহ লাইনে রানাঘাট থেকেও যাওয়া যায়। জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে একাধিক পিকনিক স্পট। পিকনিক স্পটটির ভাড়া বেশি নয়। অভয়ারণ্য ঘুরতে প্রবেশ মূল্য মাথাপিছু মাত্র ১০ টাকা। এখানে রয়েছে ইছামতির তী্রে অমর কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত ঘাট এবং তাঁর দ্রষ্টব্য জিনিস। বন দফতরের লজ রয়েছে। শীতকালে পারমাদান পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। অভয়ারণ্যে প্রচুর হরিণ রয়েছে। যোগাযোগ ০৩৩-২৫৫২০৯৬৮।

কল্যাণী পিকনিক গার্ডেন  :  পিকনিকের কথা ভেবেই এই পার্কের নাম। এখানে শীতের সময় চড়ুইভাতির উদ্দেশ্যে প্রচুর জনসমাগম হয়। বিভিন্ন টুরিস্ট পার্টি এখানে পিকনিক করতে আসেন নদীয়ার এই পিকনিক স্পটটিতে। পার্কটি শীতকালে রঙবেরঙের সিজন ফ্লাওয়ারে ভরে থাকে। শিয়ালদহ থেকে কল্যাণী এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ। কল্যাণী সীমান্ত স্টেশন থেকে কাছেই এই পিকনিক স্পটটি।কাছে রয়েছে দোকান- বাজার। প্রবেশমূল্য,  মাথাপিছু ১০ টাকা।স্পট ভাড়া আলাদা। যোগাযোগ -৯৩৩৯৮৭৬৮২৩ নম্বরে করা যেতে পারে । সাজানো-গোছানো এই পিকনিক স্পটটি ।

মাইথন  :  শুধু পিকনিক স্পটই নয়, উইক-এন্ড ট্যুর হিসেবে বিখ্যাত মাইথন। এখানে দামোদরের তীরে গাছগাছালির মধ্যে পিকনিক করার মজাই আলাদা। পিকনিকের ফাঁকে দেখে নেওয়া যায় কল্যাণেশ্বরী মায়ের মন্দির।মাইথন ড্যাম বিখ্যাত। ব্যারেজের জলের পারে ঘুরতে, ভ্রমন করতে বেশি ভালো লাগে। শীতের সময় প্রচুর লোক এখানে আসেন দলবদ্ধ ভাবে বনভোজন করতে। বর্ধমানের অন্যতম পিকনিক স্পট মাইথন। যোগাযোগ ০৩৪১-২৫২০৮৯৪, মোবাইল ৯৭৩২১০০৯৪০। রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তরের  মাইথন ট্যুরিস্ট লজ।  অপরূপ শোভা যার। এখানে রাত্রিকালের মজাই আলাদা। শীতের সিজনে তাই মাইথনের আকর্ষণ বাড়ে।

সুজন ঠাকুরতা

[:]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *