[:bn]মেঘেদের জ্ঞানলাভ[:]

[:bn]মেঘেদের জ্ঞানলাভ[:]

July 14, 2018

[:bn]চুনী দাশ

মেঘেরা গিয়ে সূর্যদেবকে সবিনয়ে বললে, ঠাকুর, আমরা আপনার স্নেহছোঁয়ায় সাগর মায়ের বুকে জন্ম নিয়ে- ধূসর ধু ধু মাঠ-ঘাট, খেত-খামার, চৌচির নদীনালা, খাল-বিল, ডোবাডাবা, দগ্ধ পাহাড়-পর্বত ,মরুময় ঊষর প্রান্তর- বৃষ্টির ধারাজল ঢেলে ঢেলে সবুজ-সতেজ- সুন্দর করে রাখতে চাই, কিন্তু দুষ্টু হাওয়ারা আমাদের তা করতেদেয় না! ওদের খেয়াল-খুশি মতন যখন যেখানে ইচ্ছে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়, তাড়িয়ে নিয়ে যায় ,ছুটিয়ে নিয়ে যায় এবং সেখানেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে বাধ্য করে। এই অবস্থায় আমাদের মেঘেদের কী করণীয় আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দিন।

মেঘেদের কথা শুনে খানিকক্ষণ ভেবেচিন্তে সূর্যদেব বললেন, তোমরা সাগরের কাছে যাও।

তাই মেঘেরা সাগরের কাছে গেল। গিয়ে বিনীত সুরে বলল, মা ,আমরা তো সূর্যঠাকুরের স্নেহের পরশে তোমার স্নেহকোমল বুকে জন্মলাভ করে তোমারই একান্ত মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে ধূসর ধুধু মাটঘাট,খেতখামার, চৌচির নদীনালা খালবিল ডোবাডাবা, দগ্ধ পাহাড়-পর্বত, মরুময় ঊষর প্রান্তর বৃষ্টির ধারাজল ঢেলে ঢেলে সবুজ -সতেজ – সুন্দর করে রাখতে চাই, কিন্তু দুষ্টু হাওয়ারা আমাদের তা করতে দেয় না! ওদের খেয়ালখুশি মতন যেখানে ইচ্ছে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়, তাড়িয়ে নিয়ে যায় ,ছুটিয়ে নিয়ে যায় এবং সেখানেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে বাধ্য করে। এই অবস্থায় আমাদের মেঘেদের কী করণীয়- আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দাও।

মেঘেদের কথা শুনে খানিকক্ষণ ভেবেচিন্তে স্নেহময়ী সাগর বললেন, তোমরা  পবনদেবের কাছে যাও।

তাই মেঘেরা পবনদেবের কাছে গেল। গিয়ে সবিনয়ে বলল, ঠাকুর, আমরা তো সূর্যদেবের স্নেহচুমোয় সাগর মায়ের স্নেহকোমল বুকে জন্ম নিয়ে ধূসর ধুধু পৃথিবীকে সর্বদা সবুজ- সুন্দর- শস্যশ্যামল করে রাখতে চাই, কিন্তু আপনার স্নেহধন্য ছেলেপুলে ও সৈন্য সামন্তের জন্যে আমরা তা করতে পারিনে। ওদের খেয়ালখুশি মতন ওরা আমাদের যেখানে- সেখানে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে বাধ্য করে। এ ব্যাপারে আপনি যদি অনুগ্রহ করে ওদের একটু সাবধান করে দেন, তাহলে আমরা মেঘেরা সমগ্র পৃথিবীর প্রকৃত কল্যাণের কাজে লাগতে পারি।

মেঘেদের কথা শুনে পবনদেব তাঁর ছেলেপুলে ও বায়ুসেনাদের ডাকালেন এবং মেঘেদের এই অভিযোগের কথা শোনালেন। তারপর বললেন, এ ব্যাপারে তোমাদের বক্তব্য বলো।

পবনদেবের কথা শুনে বায়ুসেনাপতি এগিয়ে এলেন। তারপর পবনদেবকে কুর্নিশ করে বলতে লাগলেন, মহারাজ! মেঘেরা আমাদের সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছে। তাই, আপনার দরবারে মেঘেরা আজ আমাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নিয়ে এসেছে। তাই বলিঃ

প্রথমত, আমরা যদি না থাকতাম,

তাহলে তো ওরা জন্মের পর আর আকাশেই উড়তে পারত না, ভাসতে পারত না। কাদের মাধ্যমে মেঘেরা চলাচল করত? জল ছাড়া কি জলজ প্রাণী চলাফেরা করতে পারত?

দ্বিতীয়ত, আমরা আমাদের দেহের ভাঁজে ভাঁজে প্রাণবায়ু অক্সিজেন বহন করি এবং তা জল ও স্থলের প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর কাছে অনবরত পৌঁছে দিতে থাকি। এই অক্সিজেন ছাড়া কি কেউ বাঁচতে পারত?

তৃতীয়ত, আমরা বিষবায়ু কার্বন-ডাই-অক্সাইডও বহন করি। এবং তা সবুজ পাতার কাছে প্রতিনিয়ত পৌঁছে দিতে থাকি। সূর্যের আলো বা আলোর সাহায্যে সবুজ পাতারা সেই বিষবায়ু কার্বন-ডাই-অক্সাইড দিয়ে প্রাণবায়ু অক্সিজেন ও শর্করা নামক খাদ্যবস্তু তৈরি করে- যা উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলকে বাঁচায়, জীবনদান করে। আমাদের সাহায্য ছাড়া কি সবুজ পাতারা তা করতে পারত?

চতুর্থত, কখনো কখনো পরিবারের উপরিভাগের কোনো  কোনো স্থান বায়ুশূন্য হয়ে পড়ে। তাই  সে স্থান চটজলদি পূরণের জন্যে আমরা বায়ুরা পাগলের মতন ছুটে যাই। কিন্তু মেঘেরা এসে প্রবল- প্রচন্ড বেগে আমাদের বাধা দিতে থাকে। আমরা চোখের সামনে সেই বায়ুশূন্য স্থানের উদ্ভিদ- প্রাণীকুলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে দিতে পারি না। কারণ, বায়ুশূন্য স্থান মানেই প্রাণবায়ু অক্সিজেন শূন্যস্থান। যে অক্সিজেন ছাড়া কেউই বাঁচতে পারে না। তাই, আমরা মেঘেদের বাধা কোনোভাবেই মানতে পারি না। তখন মেঘেদের সঙ্গে আমাদের লড়াই বেধে যায়। মেঘেরা তখন তর্জন- গর্জন করতে করতে প্রবল বিক্রমে আমাদের আক্রমণ করতে থাকে। ফলে মেঘেরা ওদের দেহের তাপ হারিয়ে হারিয়ে শীতল হতে থাকে। তারপর একসময় ভারী হয়ে বৃষ্টিরূপ ধারণ করে ওরা ঝরে পড়তে বাধ্য হয়।

মহারাজ! এবার বিবেচনা করে দেখুন, মেঘেদের অভিযোগ কতটুকু সঠিক।

এবার পবনদেব মেঘেদের উদ্দেশ্যে মেঘসর্দারকে বললেন, এখন তোমরাই ঠিক কর, আমার কী করা কর্তব্য। আমি কি বায়ুসেনাদের আর আমার ছেলেপুলেদের গৃহবন্দী করে রাখব?

মেঘসর্দার ভেবেচিন্তে দেখল এবং সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বুঝে অবশেষে বলল, ঠাকুর, বায়ুসেনাপতি যা যা বললেন, তা সবই সত্যি। সাগর মায়ের বুকে মেঘের জন্ম হলেও বায়ু বিহনে আমরা  মেঘেরা তো আকাশে উড়তেই পারতাম না। তখন মেঘেদের তো অস্তিত্বই থাকত না।

এ কথা বলে তারপর মেঘসর্দার করজোড়ে নতমস্তকে বললে, ঠাকুর, এবার আমরা বুঝতে পেরেছি, আমাদেরই বুঝতে ভুল হয়েছিল।  আর এই ভুল বোঝার ফলে এই পৃথিবী ধ্বংস হতে বসেছিল। অজ্ঞানদের নিজগুণে ক্ষমা করুন ,ঠাকুর! অজ্ঞানতাই বড় অভিশাপ। আমরা মেঘেরা আমাদের অভিযোগ তুলে নিলাম।

এই বলে নতমস্তকে মেঘেরা স্ব-স্ব স্থানে ফিরে যেতে লাগল।[:]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *