[:bn]রান্নাবান্না (লাহা বাড়ির পুজোর কিছু মিষ্টি )[:]

[:bn]রান্নাবান্না (লাহা বাড়ির পুজোর কিছু মিষ্টি )[:]

March 29, 2018

[:bn]সময়টা আনুমানিক ১৮৫৭ সাল। লাহা পরিবারের চারজন আদিপুরুষ মহারাজা দুর্গাচরণ লাহা, শ্রীকৃষ্ণ লাহা ,শ্যামাচরণ লাহা ও ভগবতী চরণ লাহা কলুটোলার জ্যাকেরিয়া স্ট্রিট থেকে বাসাবদল করে ১ নম্বর  বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিটে একটি বাড়ি কেনেন এবং সেখানে দুর্গাপূজার প্রচলন করেন।যদিও তারও বছর  তিরিশেক আগে লাহা পরিবারের মেজতরফের এক গিন্নি (নবকৃষ্ণ লাহার স্ত্রী) অষ্ট ধাতু নির্মিত এক সিংহবাহিনী মূর্তিকে স্বপ্নাদেশে কুড়িয়ে পান ও শ্রী শ্রী জঁয় জঁয় মাতা রূপে লাহা পরিবারের কুলদেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।তখনও সেভাবে কোনো দুর্গামূর্তি লাহা পরিবারে ধুমধামের সঙ্গে পূজিতা হতেন না। কুলদেবীর আগমনে লাহা পরিবারের ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি হলে প্রথমে বাড়িবদল ও পরে মহা আড়ম্বরে দুর্গাপূজার প্রচলন করা হয়। তবে অবশ্যই কুলদেবি শ্রী শ্রী জঁয় জঁয়  মাতাকে সামনে রেখেই মা দুর্গার বন্দনা করা হয়। অউজার নানান বিধি,আচার-উপাচার অত্যন্ত নিয়ম মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। এর একবিন্দু ব্যাতিক্রম হবার জো-টি নেই। বহু বছর ধরে চলে আসা বাড়ির তৈরি বিবিধ মিষ্টি, শুকনো খাবার(লুচি, বেগুনভাজা, কুমড়োরছক্কা, পাঁচ রকম ভাজা ইত্যাদি) থেকে শুরু করে মিষ্টি দই, পানটি পর্যন্ত যেন সব নিয়ম মাফিক।

বিবিধ মিষ্টিগুলি সম্পূর্ণ হাতের তৈরি। শে যুগে গিন্নিরা নিজ হাতে এগুলো প্রস্তুত করতেন। এখন সেগুলির প্রস্তুত প্রনালি মেনেই তৈরি করেন রান্নার বামুনেরা। এই মিষ্টিগুলির মধ্যে থেকে মাত্র ছয়টি মিষ্টির উপকরন প্রণালী সহ এখানে বিবৃত করলাম।

চূর্ণের নাড়ু (আনুমানিক ৮ জনের মতো)

উপকরনঃ সুজি ২৫০ গ্রাম, চিনি ২০০ গ্রাম, ছোটএলাচ ৬ টি, কর্পূর ১ চিমটে, গাওয়া ঘি ৫০ গ্রাম।

প্রণালীঃ প্রথমে শুকনো কড়াইতে ঘি দিয়ে সুজিটা নাড়তে হবে। চিনি মিক্সিতে গুঁড়ো  করা যেন থাকে। সুজি অল্প ভেজে(লাল হবে না কিন্তু) রেখে তার ওপর চিনিগুঁড়ো দিয়ে হাতায় নেড়ে মিশ্রণটি একটা বড় পাত্রে ডেলে রাখতে হবে। তার ওপর ছোট এলাচ(খোসা ছাড়ানো) মিশিয়ে এক চিমটে কর্পূর ভালো করে মেশাতে হবে। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হলে সেইগুলি গোল্লা করে নাড়ুর মতো হাতে পাকাতে হবে। অত্যান্ত সুস্বদু এই মিষ্টিটি জলখাবার হিসেবে কিন্তু অনবদ্য।

খইয়ের নাড়ু (৮ জনের মতো)

উপকরনঃ খই ২৫০ গ্রাম, ঘি পরিমাণ মতো, চিনি ৪০০ গ্রাম।

প্রণালীঃ প্রথমে কড়াইতে পরিমাণমতো ঘি দিয়ে খইগুলি নাড়তে হবে। এবার সেতি ঠাণ্ডা হলে গোল্লা পাকিয়ে একটি বড় পাত্রে রাখতে হবে। সেখানে ওই ৪০০ গ্রাম চিনির রস করে খইয়ের ওপর ডেলে দিতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হলে গোল্লাগুলি সাবধানে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আরেকটি বড় পাত্রে রেখে তারপর পরিবেশন করুন।

এলোঝেলো গজা(৮ জনের মতো)

উপকরনঃ ময়দা ২৫০ গ্রাম, পরিমাণ মতো ময়ান, অল্প কালো জিরে, চিনি ৪০০ গ্রাম।

প্রণালীঃ প্রথমে পরিমাণ মতো ময়ান দিয়ে ময়দা মেখে লুচির মতো বেলে মাঝখান থেকে লম্বা লম্বা করে চার পাঁচটা দাগ দিতে হবে। দাগগুলি যেন মাঝবরাবর হয়। এরপর লুচিটির দুটি প্রান্তদেশ সাবধানে মুড়ে ঘি দিয়ে ভাজতে হবে। এরপর সেটি কড়াই থেকে তুলে একটি বড় পাত্রে রেখে ঠাণ্ডা করে তার ওপর মোটা চিনির রস    ঢালতে  হবে।

বেসনের নাড়ু(৮ জনের মতো)

উপকরনঃ চিনি ২৫০ গ্রাম, বেসন ২৫০ গ্রাম, এক চিমটে কর্পূর, আমন্ড বাদাম পাতলা করে কাটা(পরিমাণমতো)

প্রণালীঃ বেসন ঘিয়ে ভালো করে ভাজতে হবে। চিনি ততক্ষণে গুঁড়ো করে রাখতে হবে। এরপর চিনিগুঁড়ো বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে কড়াইতে হাতায় করে নাড়তে হবে তারপর একটি বড় পাত্রে ঢেলে আমন্ড, কর্পূর মিশিয়ে মিশ্রণটি ঠাণ্ডা করে নাড়ু পাকাতে হবে।

প্যাড়াকি (১০ জনের মতো)

উপকরনঃ ময়দা ১ কিলো, নারকেল ২টি, গুড় পরিমাণমতো, বড় এলাচ পরিমাণমতো, চিনি পরিমাণমতো।

প্রণালীঃ প্রথমে নারকেল কুরে শুকনো কড়াইতে গুড় দিয়ে পাক করতে হবে। থাদা হলে কর্পূর ও বড় এলাচ দিয়ে মিশ্রণটি ভালো করে নেড়ে নিতে হবে।

এরপর ময়দা দিয়ে লুচি যেভাবে হয় সেভাবে করে তার মধ্যে মিশ্রণটি পুরে ঐ গোল লুচিটি একভাঁজ করে, ওর দুতি পাশকে জুড়ে বিনুনি আকারে করতে হবে। তারপর সেটা ঘি দিয়ে ভাজতে হবে। ঠাণ্ডা হলে সেটির ওপর চিনির রস ঢালতে হবে।

মুগের নাড়ু

উপকরনঃ গুঁড়ো মুগ ৫০০ গ্রাম, গুঁড়ো চিনি ২০০ গ্রাম, এক চিমটে কর্পূর, ঘি ১০০ গ্রাম।

প্রণালীঃ কড়াইতে ঘি দিয়ে মুগটি ভালো করে ভেজে তারপর নামিয়ে ঠাণ্ডা করে কর্পূর, বড় এলাচ ও গুঁড়ো চিনি মিশিয়ে গোল্লা গোল্লা করে নাড়ু তৈরি করতে হবে।

সুষ্মেলি দত্ত

 [:]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *