[:bn]সাপ নিয়ে নানা কথা[:]

[:bn]সাপ নিয়ে নানা কথা[:]

January 10, 2018

[:bn]সাপ কথাটা শুনলেই অনেক কেমন আঁতকে উঠবে, তাই না ? সাপ নিয়ে নানা গল্প কল্পকাহিনী চারিদিকে যে ভাবে ছড়িয়ে আছে তাতে ভয় পাওয়ায়ই কথা। যেমন সাপ মানুষের পরিণত হওয়ার গল্প, সাপের পাহারায় গুপ্তধনের গল্প, সাপে কাটা রোগীকে সাথে সাপের দ্বারা বিষ তোলার গল্প ইত্যাদি। এছাড়া বেহুলা লক্ষিনদারের গল্প তো আছেই। তোমরা জেনে রাখ এসব কিন্তু শুধু গল্পই।এসবের পিছনে কোন সত্যতা নেই। আসলে ছেলেবেলা থেকেই আমরা এসব গল্প শুনে শুনে এত অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে গল্পগুলো এখন আমাদের কাছে সত্যি বলে মনে হয়। যেমন আমাদের মধ্যে অনেকেরই একটা ভুল ধারণা আছে যে সাপ নাকি রাতের বেলা গোয়াল ঘরে ঢুকে গরুর দুপা শক্ত ভাবে পেচিয়ে ধরে, এবং গরুর বাঁট থেকে দুধ চুষে খায়। আসলে কিন্তু তা নয়। এটা সম্পূর্ণ অবাস্তব কল্পনা। তোমরাও জেনে রাখ, স্তন্যপায়ী প্রাণীর শারীরিক গঠন আর বৈজ্ঞানিক যুক্তি প্রমান করে দিতে পারে যে এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়।

 

মানুষ বা যেসব স্তন্যপায়ী প্রাণী চুষে দুধ খায় তাদের ঠোঁট ছোঁয়াল থেকে আলাদা| আর সাপের চোয়ালের ওপর বড়শির মতো পেছন দিকে বাঁকানো দাঁত থাকায় সাপের মুখ কিছুতেই চুষে বা শুষে কোনো জিনিস খাবার উপযুক্ত নয় ।তোমরা হয়তো দেখে থাকবে যে সাপুড়েরা সাপকে দুধ খাওয়াচ্ছে ,সেটা হলো ,স্যাপ বাধ্য হয়ে দুধটা খায় কারণ সাপুড়েরা কয়েকদিন ধরেসাপকে জল খেতে না দেওয়াতে দারুন তেষ্টা এড়াতে এভাবে দুধ খেতে অভ্যস্ত হয়ে যায় তারা ।তখন সাপুড়েরা বলে যে স্যাপ দুধ ছাড়া কিছুই খাই না ।অনেক সময় জল না পেয়ে দি -হাইড্রেশনের জন্য সাপ বাধ্য হয়েই দুধ খেয়ে থাকে ।

 

তোমরা অনেক বই এ পড়েছো বা শুনেছ সাপের মাথায় মনি হয় ।এই ভুল ধারণাটা ও কিন্তু বহুকাল থেকে চলে আসছে ।এমনকি বেড়ে ও সাপুড়িয়ার দোল স্যাপ খেলা দেখাবার সময় সাপের মনি বলে ছোট মুক্ত বা চকচকে পাথর বিক্রি করে লোকেদের বোকা বানিয়ে আসছে ।গোখরো সাপের মাথায় ফনার ওপর আঠা দিয়ে এগুলোকে আটকে ‘সাপের মনি ‘বলে ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে আসছে ।আসলে সাপের মাথায় মনি বা এ জাতীয় পাথুরে জিনিস কখনো তৈরী হয় না ।তোমাদের আরও জানিয়া রাখি স্যাপ মানুষকে তারা করে না কারণ সাপ খুব ধীর গতিতে চলে ।শুধু আত্মরক্ষার জন্য দৌড়োনোর প্রয়োজন বোধ করে ।তাও মাত্র ১০/১৫ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেই সে দুর্বল হয়ে পড়বে।

 

অনেকেরই ধারণা সাপের পা দেখলে রাজা হওয়া যায় ।স্যাপ হলো সরীসৃপ প্রাণী ,বুকে হেটে চলে ।আসলে ভয় পেলে পুরুষ সাপের অর্ধলিঙ্গ নাম দুটি জননাঙ্গ বের হয়ে আসে ।এই অর্ধলিঙ্গ দেখেই সাপের পা থাকার ধারণা মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়ে গেথে গেছে।তাছাড়া এরকম ঘটনা খুব কমই ঘটে বলে অনেকেরই হয়তো সৌভাগ্য়র সঙ্গে এ ঘটনার তুলনা করেন ।

 

আমাদের এই পৃথিবীতে ২৭০০-রও বেশি প্রজাতির স্যাপ আছে।বেশিরভাগ সাপই কিন্তু খুব বিষাক্ত নয় ।সাপের বিষকে ভেনম বলা হয় ।সংক্ষেপে বলা যেতে পারে সাপেরা বা অন্য প্রাণীরা শিকারের কাজে এক ধরণের বিষাক্ত ফ্লুইড -ই হলো ভেনম ।পৃথিবীতে পাঁচ ইঞ্চি থেকে শুরু করে পঞ্চাশ ফুট দৈর্ঘ্যের নানারকম সাপের অস্তিত্ব রয়েছে ।সাপ সাধারণত গর্তে ,গাছের কোঠরে ,গাছের ডালে ,ইট পাথরের ফাঁকে ,জল ও বোনে জঙ্গলে বসবাস করে ।তবে নিজে গর্ত করতে না পারলেও অন্যের তৈরী করা গর্তে সে অনায়াসেই জায়গা করে নেয় ।এমনকি নিরাপদ মনে করলে মানুষের ঘর -দরের আনাচে -কানাচেও বাস করে ।তাই সাবধানে থাকা খুব প্রয়োজন ।সাপ সাধারণত ইঁদুর ,ব্যাঙ ,টিকটিকি ,মাছ ,ছোটপাখি ,স্তন্যপায়ী প্রাণী ,পোকামাকড় ,ডিম্ ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারন করে । আমাদের এই পৃথিবীকে বেশ কিছু সাপ আছে খুব বিষধর, তাদের মধ্যে ১০ টি প্রজাতির ভয়ংকর সাপ সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলো।

 

ইংল্যান্ড তাইপান : পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ যা লম্বায় প্রায় ৬ ফুট বা তারও বেশি হতে পারে। এর প্রতি কামরে নির্গত গড় ভেনমের(বিষের ) পরিমান প্রায় ৭৭ মিলিগ্রাম যা কিনা ৭৭ হাজারটি ইঁদুর অথবা ৪৪ জন মানুষকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট ।অস্ট্রেলিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাংশে এই সাপ গুলি বেশি দেখা যায় ।
কমন ক্রেইট : এই সাপটিকে অনেকেই ইন্ডিয়ান ক্রেইট বলে থকেন । এরা লম্বায় সাধারণত ৯০ সে মি থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে । প্রতি কামড়ে এই সাপ থেকে নির্গত গড় ভেনমের(বিষের ) পরিমান ৩০ মিলিগ্রাম যা একসঙ্গে ১৮,৭৫০ টি ইঁদুর অথবা ১১ জন মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম। ভারত ,শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানা এই সাপ বেশি পাওয়া যায়।

 

ব্ল্যাক মাম্বা (Black Mamba):
মুখে কালো রং বিশিষ্ট এই সাপটিকে বিশ্বের দ্রুততম সাপ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ভীষণ আগ্রাসী স্বভাবের এই সাপটি লম্বায় প্রায় ১৩ ফুট বা তারও বেশি হয়ে থাকে । প্রতি কামড়ে এদের থেকে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ৮৫ মিলিগ্রাম। এটি একসঙ্গে প্রায় ৬৬৪০ টি ইঁদুর অথবা চারজন মানুষকে এক কামড়েই মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। আফ্রিকা এদের আইডিয়াল বাসস্থান।

 

রাসেলস ভাইপার:
লম্বায় ৫.৫ ফুট সাপটি সাধারণত খোলা ঘাস যুক্ত পরিবেশে থাকতে বেশি পছন্দকরে । প্রতি কামড়ে এদের থেকে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান ১৯৭ মিলিগ্রাম যা ৬৩০০টি ইঁদুর বা ৩ জন মানুষকে একসঙ্গে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট । সুইডেন , শ্রীলঙ্কা, ভারত, চীন,ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ায় এদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।

 

কার্পেট ভাইপার :
এটি লম্বায় খুব বেশি হতে পারে না; মাত্র ৩০ ইঞ্চি । প্রতি কামড়ে এদের থেকে নির্গত গড় ভেনমের পরিমান কুড়ি মিলিগ্রাম যা ৩৩০০টি ইঁদুর বা ২ জন মানুষকে একসঙ্গে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এদের ভেনম আভ্যন্তরীণ রক্তপাত ঘটায় যা অনেক ক্ষেত্রে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে । আফ্রিকায় এদের বেশি পাওয়া যায় ।

 

এক কথায় বলা যায় সাপ আমাদের উপকারী বন্ধু। বিশেষ করে চাষিদের কাছে তো বটেই ।চাষের জমিতে পোকামাকড় ,ইঁদুর এসব খেয়ে ফসল বাঁচায়। সাপ বিষাক্ত বটে তবে সব সাপ নয় । তোমরা কিন্তু এর থেকে দূরেই থেকো । ভুলেও পরীক্ষা করে দেখতে যেও না।

 

কালীপদ চক্রবর্তী

[:]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *